উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত্রে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের তদন্তে গত দীর্ঘ ৫০ দিনেও অগ্রগতি নাথাকায় উখিয়াবাসী হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা মামলার তদন্তকাজ আরো জোরদার করে মামলার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
এই চাঞ্চল্যকর খুনের প্রকৃত আসামীকে আইনের আওতায় আনতে উখিয়ার কোর্ট বাজার স্টেশনে শুক্রবার ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টা হতে অনুষ্ঠিত মানববন্দনে বক্তারা এ আহবান জানান। সম্মিলিত উখিয়াবাসী ও ফোর মার্ডার বিচার বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও কক্সবাজার হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু, উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নেছা বেবি, অধ্যাপক প্লাবন বড়ুয়া, এডভোকেট অনিল বড়ুয়া, নুর মোহাম্মদ সিকদার, আদিত্য বড়ুয়া রাহুল, রত্নাপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ডা. মোক্তার আহমদ, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মেম্বার স্বপন শর্মা রনি, রাবিন্দ্র বিজয় বড়ুয়া ও নিহত ৪ জনের অভিবাবক রোকেন বড়ুয়া প্রমুখ।
আয়োজন কমিটির আহবায়ক মেধু বড়ুয়া তাঁর সমাপনী বক্তব্যে এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করে মানববন্ধন সফল করায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। মানববন্ধনে বক্তারা তদন্তের নামে কোন নিরীহ মানুষকে হয়রানি না করে প্রকৃত খুনীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান। বক্তারা এ হত্যাকান্ডের শুরু থেকে পুলিশ প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পিবিআই, ইউনিয়ন পরিষদ সহ প্রশাসনের সব যন্ত্র এমর্মান্তিক হত্যাকান্ডে ক্লু বের করতে নিরলসভাবে কাজ করায় তাদের ধন্যবাদ জানান। এই মানববন্ধনে সহস্রাধিক সর্বস্থরের মানুষ অংশ নেন।
পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এর ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) পুলক বড়ুয়া হচ্ছেন এ চাঞ্চল্যকর মামলার ৩ নম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও)। মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের তত্বাবধানে থাকাবস্থায় প্রথমে উখিয়া থানার এসআই ফারুক হোসেনকে, পরে একই থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারকে আইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
প্রসংগত, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ২ জনকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ গত ৯ অক্টোবর গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া (২৮) ও অপরজন হলো রোমেল বড়ুয়ার পুত্র উজ্জ্বল বড়ুয়া (২৪)। গ্রেপ্তারকৃত ২ জনই রোকেন বড়ুয়ার নিকটাত্মীয়। তারমধ্যে, রিপু বড়ুয়া হচ্ছে-প্রবাসী স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার সেজ ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী এবং ফোর মার্ডারে নিহত সনী বড়ুয়ার (৬) মা। অপর আসামি হলো রোকেন বড়ুয়ার ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল বড়ুয়া। উজ্জ্বল বড়ুয়ার বাড়ি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকোট এলাকায় অবস্থিত। উজ্জ্বল বড়ুয়াকে গত মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার শ্বশুরবাড়ি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে রিপু বড়ুয়াকে তার স্বামীর বাড়ি পূর্ব রত্নাপালং এর বড়ুয়া পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত্রে রোকন বড়ুয়ার মা সুখী বালা বড়ুয়া (৬৫), সহধর্মিণী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)কে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এরমধ্যে, নিহত রবিন বড়ুয়া রুমখা সয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্র ছিলো।
এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকেন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়েছেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
পাঠকের মতামত: